১৬ থেকে ২০শে আগস্টঃ একটি সফল প্রতিরোধ এবং প্রতিশোধের চেপে রাখা ইতিহাস

১৬ই আগস্ট, ঠিক ৭৬ বছর আগে কলকাতা সহ এই বঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে এই দিনে কলকাতার বুকে সংঘটিত হয়েছিল এক নারকীয় গণহত্যা, যার নেতৃত্বে ছিল মুসলিম লীগ। কিন্তু ভাগ্যদেবী বোধহয় হিন্দুদের জন্য সে যাত্রায় অন্য কিছু লিখেছিলেন। তাই ১৬ তারিখ শুক্রবারে একতরফা হত্যালীলার শুরু মুসলিম লীগের হাতে হলেও ১৮, ১৯ ও ২০ তারিখে চির ক্ষমাহীন এই ইসলামিক জেহাদী আগ্রাসনের পাল্টা প্রতিরোধ ও প্রতিশোধের মাধ্যমে শেষ করেছিলাম আমরা, হিন্দুরা। এই প্রতিরোধের বীরগাথার পুরোভাগে ছিলেন গোপাল মুখোপাধ্যায়, যুগল ঘোষ, ভানু বোস এবং অন্যান্যরা।

কি হয়েছিল সেই দিনগুলোতে? ১৫ই আগস্ট, ১৯৪৬, মুসলিম লীগের চাপে সরকারি ভাবে, ছুটি ঘোষণা করা হয়। সম্মত হন গভর্নর ব্যারোজও। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে হিন্দু মহাসভা লীগের এই কর্মসূচির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। ইতিপূর্বে কলকাতার ২৪টি পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ২২টিতেই হিন্দু পুলিশ অফিসার সরিয়ে মুসলিম অফিসার নিয়োগ করেছিলেন সুরাবর্দি। উদ্দেশ্য- আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলেও যাতে হিন্দুরা কোনোরকম সাহায্য না পায়।

মুসলিম ন্যাশানাল গার্ডের সদস্যদের ১৬ তারিখ সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে মুসলিম ইনস্টিটিউটে সমবেত হ‌ওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল। এক্ষেত্রে ইসলামিক গ্রন্থ মুসলিম শরীফ থেকে একটি হাদিসের উল্লেখ করলে অত্যুক্তি হবেনা। ৭৪৫ নং হাদিসে বলা আছে- “নবী যখন‌ কোনো জনপদ আক্রমণ করতেন তখন ভোরবেলায় করতেন।” বাস্তবিকই হিন্দুদের ওপর প্রথম আক্রমণের ঘটনাটি ঘটে ভোরের আলো ফোটা মানিকতলা ব্রিজে, একজন নিরীহ গোয়ালার ওপর। এরপর সকাল সাতটা নাগাদ আক্রান্ত হয় মানিকতলার ‘দেশবন্ধু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’। ৭:৩০ নাগাদ বৌবাজার আর লোয়ার সার্কুলার রোডের জংশনে, শিয়ালদায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জমা হয় মুসলিম জেহাদীরা। বেলা বাড়তেই মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা আক্রান্ত হতে থাকে।

মরুপ্রায় আফগানিস্তানের ঊষর প্রান্তরের এক মুসলমান ফল ব্যবসায়ীর বুকে পিতৃত্বের স্নিগ্ধ বারি সঞ্চার করে আপামর বাঙালীকে স্নেহসিক্ত এক ‘রহমত’ উপহার দিয়েছিলেন যিনি, সেই ছবি বিশ্বাসও রেহাই পাননি। কিংবদন্তি চিত্রাভিনেতা ছবি বিশ্বাসের বাড়িতে হামলা চালায় পাকিস্তানের দাবিদার কলকাতাবাসী মুসলমানেরা আজ থেকে ঠিক ৭৬ বছর আগে।

এক সময় ছিল এলজেব্রা মানে কেপি বসু। এরিথমেটিক মানেই যাদব চক্রবর্তী। পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জের যাদব চক্রবর্ত্তী ভারতীয় গণিত চর্চার প্রবাদ প্রতিম পুরুষ। বৃটিশ সরকারও তাঁকে ‘গণিত সম্রাট’ উপাধি দিয়েছিলেন। হিন্দী, উর্দু, অসমীয়া, নেপালী ইত্যাদি ভাষায় অনুবাদ হয়েছিল তাঁর বই। কথিত আছে সিরাজগঞ্জের স্কুলের ছাত্ররা অঙ্ক পরীক্ষার দিন তাঁর বাড়ির মাটিতে প্রণাম করে যেত। ২৮ বছর আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছিলেন তিনি। ছাত্রদের মধ্যে মুসলিমই বেশী ছিল। কিন্তু শিক্ষকতার প্রতিদান? ১৬ই আগস্ট তাঁর কলকাতার বাসভবন আক্রান্ত হয় পাকিস্তানপন্থীদের হাতে।

শপিং মল কালচার নতুন হলেও এই কলকাতা শহরে কিন্তু ছিল অন্তত দুটি ডিপার্টমেন্টার স্টোর্স, যারা শপিং মলের আদি পুরুষ। একটি ‘হল অ্যান্ড অ্যান্ডারসন’, অপরটি ‘কমলালয় স্টোর্স’। ধর্মতলা রোডের কমলালয় স্টোর্স ছিল কলকাতার অন্যতম নক্ষত্র। এখানেই ১৯৪৩ সালে বইয়ের দোকান খোলেন রাম হালদার। বিদেশ থেকে সদ্য প্রকাশিত বইও পাওয়া যেত। আর পাশেই ছিল চায়ের দোকান। এই ঘটনা তখন কলকাতার কবি সাহিত্যিক রাজনীতিবিদ শিল্পীদের কাছে নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। লেগেই থাকত তারকা সমাবেশ। গোপাল হালদার, সুশোভন সরকার, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বিষ্ণু দে, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈয়দ মুজতবা আলি, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর… কাকে ছেড়ে কার কথা বলবেন! ১৯৪৬ সালের ১৬ই আগস্ট বিকালে কলকাতার পাকিস্তানপন্থীদের হাতে সম্পূর্ণ লুঠ হয়ে যায় কমলালয় স্টোর্স। ধ্বংস হয় কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্য।

ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’র প্রস্তুতি হিসাবে কলকাতার প্রায় সব পুলিশ বড়কর্তা পদ থেকে হিন্দুদের সরিয়ে মুসলমানদের আনা হয়। হিন্দু পুলিশরা ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে। ১৬ই আগস্ট সকাল ৯.৩০ এ বড়তলা থানা আক্রমণ করে মুসলিমরা। অসহায় পুলিশ কর্মীরা সাহায্য চায় পুলিশের সদর দপ্তরে। কোনো সাহায্য আসেনি। আবার সাহায্য চায় ৯.৫০ এ। এবারও বৃথা যায়। ধ্বংস হয় বড়তলা থানা। মেট্রো, লাইট হাউস, গ্লোব, নিউ এম্পায়ার… কলকাতার বিনোদন জগতের চার স্তম্ভ। ১৬ই আগস্ট বিকাল ৪.০৫ এ গণহত্যার কারিগরেরা আক্রমণ করে লাইট হাউস। কাছেই মেট্রো সিনেমা। মেট্রো সিনেমার পাশের কে.সি বিশ্বাসে বন্দুকের দোকান ভেঙ্গে সমস্ত অস্ত্র লুঠ করে নিয়ে যায় মুসলমানরা। রক্ষা পায়নি এলাকার কোনো হিন্দু দোকান।

এখন যার নাম সুরেন্দ্রনাথ কলেজ, আগে তারই নাম ছিল রিপন কলেজ। রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত কলকাতার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ, ভারত তথা সুপ্রিম কোর্টের প্রথম বাঙালী প্রধান বিচারপতি বিজন কুমার মুখার্জী, সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, নীরদ সি চৌধুরী, নিমাই ভট্টাচার্য, শঙ্কর, ক্রীড়াবিদ শৈলেন মান্না, বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়, ভাস্কর চিন্তামণি কর প্রভৃতি ছিলেন এই কলেজের ছাত্র। শিকাগোতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দ তার সুবিখ্যাত অমৃত বচন প্রদান করে ভারতে ফিরে কলকাতায় এ কলেজের বেদীতে তার ১ম বক্তব্য প্রদান করেছিলেন। দাঙ্গাবাজ বাহিনী সকাল ১১.১৫ তে আক্রমণ করে রিপন কলেজ, বাঙ্গালীর শিক্ষার অন্যতম পীঠস্থান।

শিয়ালদহ স্টেশন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ অবধি বহু ঘটনার সাক্ষী। তবে শিয়ালদহের নির্মমতম অভিজ্ঞতা হয়েছিল ১৬ই আগস্ট সকালেই। সকাল ৯টা নাগাদ প্রথম আক্রান্ত হয় শিয়ালদহ। তারপর কয়েক দিন ধরে প্রায় সর্বক্ষণ চলে লুঠপাট খুন মিছিল। কাছেই রাজাবাজার, সেটিই ছিল শিয়ালদহের অন্যতম দুর্বলতা। হয়ত আজও তাই আছে।

ডাইরেক্ট এ্যাকশন ডে এর প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল শ্রী গোলক বিহারী মজুমদার আই.পি.এস, “ছেচল্লিশের আতঙ্কের দিনগুলো ভুলি নি”- শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। সেই প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেছেন, “…. রাজা বাজারের উপর দিয়ে আমাকে যেতে হতো। একদিন দেখলাম, গরু কেটে যেমন হুকের সাথে ঝুলিয়ে রাখে, তেমনিভাবে দেখলাম, হাত পা কাটা হিন্দু মেয়েদের চুল বেঁধে সব ঝুলিয়ে রেখেছে। বিভৎস আর নৃশংস সেই দৃশ্য।”

দেবকুমার বসু, “১৯৪৬ এর দাঙ্গার কয়েকটা দিন” নামে একটি লেখা লিখেছেন ২০০৬ সালে; সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, “রাজা বাজারের সামনের ভিক্টোরিয়া কলেজ ও স্কুল। মেয়েদের কলেজ ও হোস্টেল একদম ফাঁকা, সব পালিয়েছে। কেবলমাত্র রাস্তার দোতলার জানালায় চারটি মেয়েকে খুন করে রাস্তার দিকে ঝুলিয়ে রেখেছে, কে বা কারা। এই নৃশংসতা ও বিভৎসতা যারাই দেখেছেন, তারাই অনুভব করতে পারেন যে, আমাদের মতো, যুবকেরা কেনো উত্তেজিত হয়ে ক্ষিপ্ত হবে। কেউ এই হোস্টেলের দিকে তাকালে রাস্তার দিকের জানালাগুলি ইট গেঁথে বন্ধ করে দেওয়া আছে, দেখবেন।”

প্রায় ২০০ বছরের পুরানো কলকাতার বেঙ্গল ক্লাব বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। গণহত্যার দিন বিকাল ৪.২০ তে মুসলমান বাহিনী আক্রমণ করে বেঙ্গল ক্লাব।রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রীট সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার মধ্যে পড়ে। সেখানে এমন একটিও হিন্দু বাড়ী ছিল না যেটি মুসলিমদের হাতে আক্রান্ত হয়নি। এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত ছিল। লুঠপাটের সাথে চলেছিল অবাধ গণধর্ষণ।

এ কোনো সাধারণ সংগ্রাম ছিল না, ছিল ‘জিহাদ’, ‘কাফের’ হিন্দুদের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ। আগামী দেড়দিনব্যাপী ‘আল্লাহো আকবর”, “নারা-এ-তকদীর, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান” ধ্বনিতে ব্যাপ্ত হয়ে থাকলো মহানগর, আগুনে জ্বলতে লাগলো হিন্দুদের স্থাবর-অস্থাবর যা কিছু। ইতিমধ্যে ১৭‌ই আগস্ট গার্ডেনরীচ টেক্সটাইল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি সৈয়দ আবদুল্লা ফারুকির নেতৃত্বে উন্মত্ত মুসলিম জনতা মেটিয়াব্রুজের লিচুবাগান বস্তির কেশোরাম কটন মিলের কয়েকশো  হিন্দু শ্রমিককে হত্যা করে। দাঙ্গার নারকীয়তায় ফুঁসে ওঠে কলকাতার হিন্দু সমাজ। ১৭ই আগষ্টের রাতে ইসলামের এই জিহাদের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে ঘুরে দাঁড়াল কলকাতার বুকে প্রায় ৮০০ হিন্দু ছেলের দল। এদের মধ্যে ছিল বাঙালি, বিহারি, উড়িয়া এবং পাঞ্জাবি- একত্রিত হিন্দু সমাজ। এই কালান্তক দাঙ্গায় হিন্দুদের জন্য যখন সর্বত্র সর্বনাশ অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখন‌ই অগ্নিস্ফূলিঙ্গের মতো আবির্ভূত হন শ্রী গোপাল মুখোপাধ্যায় ওরফে গোপাল পাঁঠা। সঙ্গে পেলেন যুগল ঘোষ এবং ভানু বোসদের মতো তর তাজা কিছু বাঙালি প্রাণ। দু দিনে মুসলমানদের হাতে পাঁচ হাজারের ওপর মানুষের সুপরিকল্পিত খুনের পর শুরু হলো সেই রাত থেকে হিন্দুদের পাল্টা মারের এক অবিশ্বাস্য রুদ্ধশ্বাস প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-প্রতিশোধের তিন দিন। রক্তে আদায় করা রক্তের ঋণ।

হরেন ঘোষের মাধ্যমে আগে থেকেই খবর পেয়েছিলেন জিহাদি পাকিস্তানপন্থীদের হাওড়া ব্রিজ সহ মনুমেন্ট, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, টালা ট্যাংকের মতো কলকাতার বেশ কিছু স্থাপত্য কে বোম দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা, গঙ্গার এপারের পুরো কলকাতা সহ আজকের পশ্চিমবঙ্গের অর্ধেকের বেশি এইভাবে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করার ছক। এই নাশকতা  রুখে দেবার সংকল্প নিয়ে নেতাজির আদর্শে বলীয়ান গোপাল মুখোপাধ্যায় তলে তলে সংঘবদ্ধ করেছিলেন একটি অকুতোভয় যুবকদের বাহিনী। ধর্মের গ্লানি এবং স্বধর্মীয়দের এই অসহায়তা দেখে গোপাল পাঁঠা রাতারাতি ৮০০ জন হিন্দু যুবককে নিয়ে গড়ে তুললেন এক সশস্ত্র বাহিনী – ভারত জাতীয় বাহিনী। তাঁর নির্দেশ ছিল- ‘একজন হিন্দুকে খুন হতে দেখলে দশজন মুসলমানকে হত্যা করবে তোমরা। কিন্তু মুসলমান পশুদের মতো কোনো মহিলা বা শিশুর গায়ে হাত দেবেনা।’ এক‌ইভাবে বিজয় সিং নাহার স্থানীয় হিন্দু যুবকদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘সশস্ত্র প্রতিরোধ বাহিনী’। তাঁকে সাহায্য করেন কংগ্রেস নেতা ইন্দুভূষণ বিদ, দেবেন দে এবং ফরোয়ার্ড ব্লক নেতা রাম চ্যাটার্জী। এগিয়ে আসে হিন্দু মহাসভা। স্থানীয় ক্লাবগুলি, যেমন বাগবাজারের জাতীয় যুব সংঘ ও দেশবন্ধু ব্যায়াম সমিতি, বৌবাজারের হিন্দু শক্তি সংঘ, পার্কসার্কাসের তরুণ ব্যায়াম সমিতি ও আর্য বীর দল, এন্টালি ব্যায়াম সংঘ, হাওড়ার সালকিয়ার তরুণ দল, শ্রীরামপুরের মিতালি সংঘ প্রভৃতিও যথোপযুক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। শিয়ালদার ভানু বোস, যুগল ঘোষ, বসু মিত্র কিংবা শ্যামবাজারের কালুর মতো হিন্দু যুবকরা সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়ে নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করতে। পরবর্তীতে গান্ধীজির সাথে দেখা করে গোপাল পাঁঠাকে অস্ত্রসমর্পণ করতে বলা হলে ক্ষাত্রবীর্যের মূর্ত প্রতীক গর্জে ওঠেন- ‘একটি পেরেক‌ও যদি আমার হিন্দুভাইদের রক্ষাকল্পে, নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, আমি সেটিও সমর্পণ করবো না।’ নৃশংসতার জবাব কয়েকগুণ নৃশংসতার মাধ্যমে দেওয়া হলে এবার পিছু হঠে মুসলিম লীগ। লাল বাজারের কন্ট্রোলরুমে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখা গেল হতাশ সুরাবর্দীকে। মুসলিমদের প্রাণরক্ষার্থে কলকাতায় আর্মি নামান সুরাবর্দী। ২২শে আগস্ট শহরে দাঙ্গার পরিসমাপ্তি ঘটে।

১৬ থেক ২০ আগস্ট, ১৯৪৬… কলকাতার বুকে – পুরোটা একটা ঘটনাক্রম। একটা যুদ্ধের শুরু আর শেষ- পুরোটাই একটা ঘোষিত ধর্মযুদ্ধ। আর যুদ্ধে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হলো তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল যুদ্ধে কে জিতলো সেটা। আর এই ধর্মযুদ্ধে আমরা, হিন্দুরা জিতেছিলাম। সেই বিজয় উৎসব উৎযাপিত করতে হবে। ১৬ই আগস্ট থেকে ২০শে আগস্টের ঘটনাপ্রবাহ গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং নয়, এ আসলে হিন্দুদের সফল প্রতিরোধ এবং প্রতিশোধের ইতিহাস, যে ইতিহাস প্রজন্মের পর প্রজন্ম হিন্দুদের গর্বিত করবে। এই পাঁচদিন ভারতবর্ষ তথা পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়। আসুন, সকল হিন্দুর কাছে এই বিজয়বার্তা পৌঁছে দিই এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই বিজয়োৎসব পালন করি।

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

%d bloggers like this: