হরিয়ানায় বেসরকারি চাকরিতে ভূমিপুত্রদের জন্য ৭৫% সংরক্ষণ হল। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে প্রথম সমস্যা হল ভূমিপুত্র কারা সেটা সংজ্ঞায়িত করা।
১৯৪৬ এর নির্বাচনে এই বঙ্গদেশের ৯০% এর বেশি মুসলমান পাকিস্তানের দাবির পক্ষে মুসলিম লীগকে ভোট দিয়েছিল। ১৯৪৭ এর ২০ শে জুন অখণ্ড বঙ্গের মুসলিম প্রতিনিধিদের মধ্যে একজনও পশ্চিমবঙ্গ গঠনের পক্ষে এবং পাকিস্তানে যুক্ত হওয়ার বিপক্ষে ভোট দেয় নি। যারা মনেপ্রাণে চেয়েছিল গোটা বাংলাই পাকিস্তানে যুক্ত হোক, কিন্তু সেটা না হওয়ায় এই নাপাক পশ্চিমবঙ্গেই থেকে গেল, এবং এই মাটির উপরেই জায়গায় জায়গায় মিনি পাকিস্তান গঠনের প্রক্রিয়া চালাতে থাকলো, তাদের কি ভূমিপুত্র বলা যায়?
পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অঙ্গরাজ্য। সুতরাং অন্যান্য রাজ্য থেকে যেকোনও লোকের এখানে এসে বসবাস করার, ব্যবসা করার, চাকরি করার, লেখাপড়া করার সাংবিধানিক অধিকার আছে। কিন্তু এই অধিকারের কি কোনও সীমা থাকা উচিত নয়? এই অধিকারের যদি কোনও সীমা না থাকে তাহলে যারা স্বভাবত আগ্রাসী নয়, তাদের অস্তিত্ব থাকবে? তাদের ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি বেঁচে থাকবে? যেখানে সহোদর ভাইদের মধ্যে প্রত্যেকের অধিকার শুধুমাত্র ‘গুডউইল’ এর উপরে রক্ষিত হয় না, আইনের উপরে নির্ভর করতে হয়, সেখানে হিন্দু বলেই বাঙ্গালী হিন্দুদের উপরে অবাঙ্গালী হিন্দুর আগ্রাসনের সম্ভাবনা নেই এবং থাকলেও সেটা মেনে নেওয়া উচিত একথা ভাবা কতটা বাস্তব সম্মত হবে? এই দৃষ্টিতেও পশ্চিমবঙ্গের ভূমিপুত্র কারা এবং তাদের অধিকার, ভাষা, সংস্কৃতি সর্বোপরি তাদের অস্তিত্ব কিভাবে সুরক্ষিত থাকবে সেটা নির্ধারিত হওয়া উচিত।
এই সমস্ত বিষয়ে বাঙ্গালীকে প্রথমে মুক্তমনা হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
একটা বিশাল প্রাণীকে কাবু করে ফেলার পরেও অজগর কিন্তু একবারে সেটাকে গিলে খেতে পারে না৷ ক্ষমতা এবং ক্ষুধা অনুযায়ী একটু একটু করে গিলতে থাকে ৷ খাওয়া কতদিনে শেষ হবে তা নির্ভর করে শিকারের সাইজের উপরে এবং শিকারীর হজম ক্ষমতার উপরে৷ শিকারের ছটফটানি দেখে কেউ বলে যে এখনও ধড়ে প্রাণ আছে, এখনও লড়াই করছে, এখনও আত্মসমর্পণ করে নি; সুতরাং যুদ্ধ শেষ হয় নি৷ তাহলে সে টেকনিক্যালি একশো শতাংশ সত্যি কথা বললেও সেই কথা কারো মনে এই আশা জাগাবে না যে, শেষ পর্যন্ত সেই শিকার অজগরের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবে৷
মুসলিম আগ্রাসনের শিকার আমাদের হিন্দু সমাজের অবস্থা আজ সেই অজগরের গ্রাসে আবদ্ধ অসহায় প্রাণীর মত। সুদীর্ঘ লড়াইয়ের পর আজকে যদি আমরা হিসাবে বসি, তাহলে দেখবো আমাদের মাটি গেছে, দেশ ছোট হয়েছে৷ আমাদের মানুষ ধর্মান্তরিত হয়ে সমাজ ছেড়ে চলে গেছে, সমাজ ছোট হয়েছে৷ রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেলেও হিন্দুর ধর্মীয় স্বাধীনতা লুন্ঠিত হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে৷ আজও বাংলার গ্রামেগঞ্জে জমি দখল চলছে অবাধে৷ হিন্দু মেয়েদের ছলে-বলে-কৌশলে হিন্দু সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে লাভ জেহাদের মাধ্যমে৷ হিন্দু সংখ্যালঘু এলাকাগুলিতে হিন্দুর ধর্মাচরণ সংখ্যাগুরুদের অনুমতি সাপেক্ষ৷ ভারতের ইসলামীকরণ চলছে নিজের গতিতে৷ আফগানিস্তান গেছে, পাকিস্তান গেছে, গেছে সোনার বাংলা৷ ভূস্বর্গ কাশ্মীর থেকেও নেই৷ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম যাওয়ার পথে৷ সম্পূর্ণ ভারতের ইসলামীকরণ শুধু সময়ের অপেক্ষা৷
আজকে ভারতে যে মুসলমানদের দেখতে পাচ্ছি, তাদের সিংহভাগই তো হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত৷ সুদীর্ঘ মুসলিম শাসনে যারা ভয়ে অথবা স্বার্থের লোভে হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়ে গিয়েছিল, তাদেরই বংশধর৷ আর ভারতের হিন্দুদের বর্তমান প্রজন্ম হল সেই সব বীর এবং ধর্মনিষ্ঠ ব্যক্তিদের উত্তরসূরী, যাঁরা সেই সময় শাসক মুসলিম শক্তির বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই করেছেন কিন্তু ধর্মত্যাগ করেন নি৷ কিন্তু আজকে আমরাই মুসলিম আগ্রাসনের সামনে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ছি৷ তাদের অন্যায়, অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে সাহস করছি না৷ বরং কোন সাহসী হিন্দু রুখে দাঁড়ালে, তাকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করার পরিবর্তে তাকেই উল্টে দোষারোপ করছি৷ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় হিন্দুরা নরকযন্ত্রণা ভোগ করেও অত্যাচারী মুসলমানদের সাথে আপোষ করে থাকাকেই নিরাপদ বলে মনে করছে৷ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা, হিন্দুর এবং তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থরক্ষার কথা বলতে গেলে এই অত্যাচারিতরাই বলে,”আপনারা এখানে আসা যাওয়া না করলেই আমরা ভালো থাকবো”৷ আর যেখানে মুসলিম সমস্যা এখনও প্রকট হয়ে ওঠে নি, সেখানকার হিন্দুরা উদাসীন৷
এই ক্লীবতা, কাপুরুষতা, জড়তা, সংবেদনহীনতাকে সম্বল করে শুধু প্রাচীন গৌরবগাথা গেয়ে কোন জাতি টিকে থাকতে পারে না৷ হিন্দুকে যদি অস্তিত্ব রক্ষা করতে হয়, তবে এই জড়তাকে ঝেড়ে ফেলে মাথা উচু করে দাঁড়াতে হবে৷ চাই একটা মরিয়া প্রয়াস৷ যেখানেই একজন হিন্দুর উপরে অত্যাচার হবে, প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে হবে৷ প্রতিকার করতে হবে তৎক্ষণাৎ৷ সাপ ফণা তোলার সাথে সাথে থেঁতলে দিতে হবে সেই ফণা ৷ তবেই হিন্দু বাঁচবে, দেশ বাঁচবে৷ মনে রাখতে হবে অন্যায়ের সাথে আপোষ করে শান্তিলাভ করা যায় না৷ শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় অন্যায়ের বিনাশ হলে৷ গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আঠারো অধ্যায় ধরে অর্জুনকে এই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন৷ অধর্মের বিরুদ্ধে আপোষহীন লড়াইয়ের বার্তাই হল গীতাসার৷ অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্ণায়ক যুদ্ধই হল ধর্ম৷ বাঁচার অন্য কোন পথ নাই৷ তাই রাসবিহারী বোস, বিনয়-বাদল-দীনেশদের এই মাটিতে আজ আবার ধ্বনিত হোক-