সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠাতা একটা ন্যূনতম লক্ষ্যমাত্রা ইঙ্গিত করেছিলেন – শহরে ৩% এবং গ্রামাঞ্চলে ২% স্বয়ংসেবক তৈরি করতে পারলেই সঙ্ঘ আদর্শে সম্পূর্ণ সমাজকে প্রভাবিত করা সম্ভব হবে। আজ সঙ্ঘ সমগ্ৰ হিন্দু সমাজের গন্ডি পেরিয়ে মুসলমানদের মধ্যেও সরাসরি সঙ্ঘের কাজ শুরু করতে চলেছে বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। সঙ্ঘের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত সঙ্ঘের অধিকারীরা নেবেন এটাই স্বাভাবিক। বাইরে থেকে সমালোচনা করা সমীচীন নয়। তবে কয়েকটা প্রশ্ন থেকেই যায়।
প্রথমত, সঙ্ঘের উদ্দেশ্য হিন্দু সমাজের মধ্যে একটা সংগঠন তৈরি করা নয়, বরং সমগ্র হিন্দু সমাজকে সংগঠিত করা- এই নীতির বর্তমান ব্যাখ্যা কী হবে?
দ্বিতীয়ত, ভারতে বসবাসরত মুসলমানদের কি সঙ্ঘ হিন্দু সমাজের অন্তর্ভুক্ত মনে করছে? এর জন্য শুধুমাত্র ডিএনএ এক হওয়াই কি যথেষ্ট? তাদের বর্তমান চিন্তন প্রক্রিয়া, দৃষ্টিভঙ্গি, দর্শন, কর্মকাণ্ড ইত্যাদি বিচার্য বিষয় নয়?
তৃতীয়ত, আরবি নাম, আরবি সংস্কৃতি, আব্রাহামিক অসহিষ্ণু দর্শনে আস্থা, দারুল ইসলামের লক্ষ্য, জেহাদ প্রতিটি মুসলমানের পবিত্র কর্তব্য বলে বিশ্বাস, গজবা-এ-হিন্দের স্বপ্ন, লাভ জেহাদ, ধর্মান্তরকরণের জন্য দাওয়াত, ব্লক ভোটের রাজনীতি – এই সমস্ত কিছু বজায় রেখেও কি ভারতে বসবাসরত মুসলমানেরা হিন্দু সমাজের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে?
চতুর্থত, অসহিষ্ণু আব্রাহামিক দর্শনে অনাস্থা রাখলে, কাফেরদের বিরুদ্ধে জেহাদকে অস্বীকার করলে, ভারতীয় পরিচয়কে মুসলিম পরিচয়ের ঊর্ধ্বে স্থান দিলেও কাউকে মুসলমান হয়ে থাকার অনুমতি কি ইসলাম আদৌ দেয়? অর্থাৎ, একজন ইমানদার মুসলমান কি একই সাথে হিন্দু হতে পারে?
আমার কাছে মুসলমানদের নিয়ে সঙ্ঘের এই আগ্রহের যৌক্তিকতা স্পষ্ট নয়। একথা সত্য যে আমাদের সকলের ডিএনএ এক। ঠিক যেমনভাবে দেবতা এবং দৈত্যদের ডিএনএ এক। উভয়েই ঋষি কশ্যপের বংশধর। কিন্তু ডিএনএ এক হলেই সমাজ এক হয় না। গান্ধীজি এই ঐক্য নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন এবং তার ফলশ্রুতিও আমরা জানি। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকা একান্ত আবশ্যক। ভারতের মুসলমানরা আসলে যে হিন্দু – এই উপলব্ধি মুসলমানদের যতদিন না হচ্ছে ততদিন আমরা এক হতে পারবো না। তাড়াহুড়ো না করে ওদের সময় দেওয়া হোক।