পশ্চিমবঙ্গ আমার রাজ্য, ভারত আমার দেশ। আমি একজন বাঙ্গালী, আমি একজন হিন্দু। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি ধূলিকণার মধ্যে দিয়ে আমি ভারতকে চিনেছি, বাঙ্গালীর সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের মধ্য দিয়ে আমি হিন্দুত্বকে অনুভব করেছি। আমি পশ্চিমবঙ্গের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অখণ্ডতা ও উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতে চাই, বাঙ্গালী জাতির সমৃদ্ধির মাধ্যমে ভারতকে সমৃদ্ধ করতে চাই। বাঙ্গালী জাতি ছিল, আছে আর থাকবে এবং ভারতীয় হয়ে, হিন্দু হয়েই থাকবে। ভারতের স্বাধীনতার জন্য বাঙ্গালী হিন্দুর আত্মবলিদান চিরস্মরণীয়। ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র, ঋষি অরবিন্দ, স্বামী বিবেকানন্দকে ভারতীয় এবং হিন্দু হওয়ার জন্য নিজেদের আইডেনটিটি বিসর্জন দিতে হয় নি।
ভারতের তথা হিন্দু সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অন্তর্নিহিত ঐক্যের মধ্যে বৈচিত্র্যকে মান্যতা দেওয়া। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের মূল সূরটা ঠিক তারে বাঁধা থাকলেই হবে। হিন্দু ঐক্যের জন্য এই বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করতে হবে- এই চিন্তা হিন্দুত্বের মূল ভাবধারার পরিপন্থী। তাই আমরা মনে করি না যে হিন্দু হতে হলে বাঙ্গালী পরিচয়কে অস্বীকার করতে হবে।
আরব সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের হাত থেকে আমাদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে রক্ষা করতে হবে, বাঙ্গালী পরিচয়কে হাইজ্যাক হওয়া থেকে বাঁচাতে হবে। বাঙ্গালী পরিচয় হাইজ্যাক হয়ে গেলে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে হিন্দুত্ব থাকবে না, যেটা আজ বাংলাদেশে হচ্ছে। অস্তিত্ব রক্ষার এই লড়াইয়ে বাঙ্গালীকেই অগ্রণী ভুমিকা নিতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গে বসবাসরত অবাঙ্গালী হিন্দুদের এবং পশ্চিমবঙ্গের বাইরে অবশিষ্ট ভারতের সকল হিন্দুদের আমরা আমাদের বৃহত্তর পরিবারের সদস্য মনে করি। এই লড়াইয়ে আমরা সকলের সহযোগিতা কামনা করি। অবাঙালী হিন্দু মূলের যে বন্ধুরা বঙ্গভূমিতে দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, এই সমাজকে নিজের সমাজ বলে মিলেমিশে গেছেন, এই সংস্কৃতিকে আত্মসাৎ করেছেন, বাংলাভাষা এবং এই ভাষায় রচিত সাহিত্যকে নিজের মনে করে গৌরববোধ করেন, সর্বোপরি নিজেদের বাঙ্গালী বলে পরিচয় দিতে কুন্ঠিত হন না- তাঁরাও ১০০% বাঙ্গালী।
ভারতের অখণ্ডতা রক্ষা করতে হলে পশ্চিমবঙ্গকে বাঁচাতে হবে। আর পশ্চিমবঙ্গকে বাঁচাতে হলে বাঙ্গালী হিন্দুদের শক্তিশালী হতে হবে। আমি উপলব্ধি করি যে বাঙ্গালী জাতিসত্ত্বার অস্তিত্ব আছে, যাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা বাঙ্গালী নই, আমরা হিন্দু- এই ন্যারেটিভ মিথ্যা, তাই এই ন্যারেটিভ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হবে। আমরা বাঙ্গালী সত্ত্বাকে অস্বীকার করলেও এই জাতিসত্ত্বা থাকবে এবং আমাদের এই সত্যকে অস্বীকার করার অপরাধে বাঙ্গালী জাতি কালক্রমে হিন্দু সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তাই ভারতের অখণ্ডতার স্বার্থে, বৃহত্তর হিন্দু সমাজের সমৃদ্ধির স্বার্থে আমি বাঙ্গালী আইডেনটিটি স্বীকার করার, বাঙ্গালী হিসেবে গৌরব অনুভব করার এবং এই জাতিসত্ত্বাকে শক্তিশালী করার পক্ষে।
One thought on “হিন্দু হতে হলে বাঙ্গালী পরিচয় ছাড়তে হবে?”