২০১৪-র এই ঘটনা আসলে হিন্দুদের প্রতিরোধ ভেঙে ফেলার চক্রান্ত

২০শে জানুয়ারি, ২০১৪। বীরভূম জেলার লাভপুর থানার অন্তর্গত আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম সুবলপুর। একটি মুসলমান ছেলেকে গ্রামবাসীরা আপত্তিকর অবস্থায় ধরে ফেলে এক আদিবাসী যুবতীর ঘরে। ছেলে এবং মেয়েটির বিচার হয় সাঁওতাল সমাজের রীতি ও পরম্পরা অনুযায়ী। ছেলের বাড়ির লোককে ডেকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং যাতে ভবিষ্যতে এই ঘটনা গ্রামের মধ্যে না ঘটে তার জন্য আদিবাসী যুবতীকে ও তার মা’কে ডেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। ঠিক দু’দিন পরে, অর্থাৎ ২২শে জানুয়ারি ওই আদিবাসী মেয়েটি নিজে সাইকেল চালিয়ে লাভপুর থানায় যায় এবং অভিযোগ করে যে তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। সুবলপুর গ্রামে পুলিশ এসে এই অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশি করে এবং গ্রামবাসীদের থানায় গিয়ে বিষয়টা মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলে ফিরে যায়। এই অভিযোগের খবর শোনার পরে সুবলপুর থেকে ট্রাক্টরে চেপে গ্রামের মোড়লের নেতৃত্বে কয়েকজন থানায় যায়। থানায় গিয়ে তারা দেখে যে এলাকার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম সেখানে উপস্থিত। একদা বামফ্রন্ট, তারপরে তৃণমূল এবং অবশেষে বর্তমানে বিজেপির নেতা এই মনিরুল ইসলামের অঙ্গুলি হেলনে পুলিশ ১৩ জন গ্রামবাসীকে তথাকথিত গণধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করে।

আশ্চর্যজনক ভাবে প্রায় সাথে সাথেই বিশ্বের তাবড় মিডিয়া পৌঁছে যায় এই প্রত্যন্ত গ্রামে। শিরোনামে উঠে আসে এই সুবলপুর। সমস্ত মিডিয়া আদিবাসী সমাজের পরম্পরাগত বিচার ব্যবস্থাকে এই তথাকথিত গণধর্ষণের জন্য দায়ী করে। এই পরম্পরাগত বিচার ব্যবস্থার কারণে একদিকে মিশনারিদের অসুবিধা হচ্ছিল ধর্মান্তরকরণে, অন্যদিকে ইটভাটা কিংবা পাথর খাদানে দিনমজুরী করা আদিবাসী মহিলাদের যৌনশোষণে সমস্যা হচ্ছিল মালিক, ম্যানেজার কিংবা ঠিকাদারদের- কাকতালীয় ভাবে যাদের অধিকাংশই মুসলমান। এই ঘটনার আগে পাঁচামির খাদান এলাকায় একজন আদিবাসী মহিলার সাথে আপত্তিজনক অবস্থায় ধৃত একজন মুসলিম ব্যক্তির মৃত্যু হয় জনরোষে। প্রতিক্রিয়ায় প্রায় ১০০ আদিবাসী ঘর পুড়িয়ে দেয় মুসলিম দুষ্কৃতীরা। হাতে অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার আদিবাসী জনতা। প্রমাদ গণে প্রশাসন এবং এলাকা ছেড়ে চলে যায় মুসলমানরা। আদিবাসী সমাজের এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধের ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার জন্যই হয়তো সুবলপুরে এই নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখেছিল মনিরুলরা।

সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে দোষীদের কঠোর শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দেয় এবং বোলপুর আদালত (অনেকের মতে গণধর্ষণের যথেষ্ট প্রমাণ হাতে পাওয়ার আগেই) অভিযুক্তদের ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের শাস্তি ঘোষণা করে।অভিযুক্তরা যাতে ন্যায়বিচার পায়, সেই চেষ্টার সাথে সাথে আমরা অভিযুক্তদের অসহায় পরিবারগুলোর পাশে তখন থেকেই যথাসম্ভব দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আজ সেই তাগিদেই গিয়েছিলাম সুবলপুরে। গ্রামবাসীদের সাথে কুশল বিনিময়, একসাথে মধ্যাহ্নভোজনের পাশাপাশি দুর্গাপুজার প্রাক্কালে অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্যদের হাতে নববস্ত্র তুলে দেওয়ার ক্ষুদ্র প্রয়াসের মাধ্যমেই কাটলো সারাদিন। এরা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আমরা এদের সাথে আছি, থাকবো।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

Design a site like this with WordPress.com
শুরু করুন